একাধিক বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত হয় অনুচ্ছেদ। কোন একটি বিষয়ের উপরে ধারাবাহিকভাবে কতগুলো বাক্য এর মাধ্যমে অনুচ্ছেদ লেখা হয়। অনেকগুলো অনুচ্ছেদ সমন্বয়ে আবার তৈরি হয় প্রবন্ধ, গল্প বা গদ্য রচনা। এক কথায় বলা যেতে পারে অনুচ্ছেদ হলো গদ্য রচনার একক। অনুচ্ছেদ রচনা ক্ষেত্রে বাক্য গুলোর ভাব বা বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাক্যগুলো পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কযুক্ত কিনা সেদিকে বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন। ভালো অনুচ্ছেদ সমন্বয়ে অসাধারণ ও আকর্ষণীয় গদ্য রচনা করা সম্ভব। নিচে আমরা গদ্য রচনার কিছু উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরছি।
অনুচ্ছেদের বৈশিষ্ট্য সমূহ
- অনুচ্ছেদ সব সময় একটি বিষয় বা একটি ভাব কে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়।
- অনুচ্ছেদ লেখার ক্ষেত্রে একাধিক ভাব বা বিষয়ের অবতারণা ঠিক নয়। একটি বিষয়ের মধ্যেই আবদ্ধ থাকা উচিত।
- অনুচ্ছেদ নির্দিষ্ট সংখ্যক লাইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এক্ষেত্রে একটি লাইন এর মাধ্যমেও একটি অনুচ্ছেদ লেখা যেতে পারে। তবে অনুচ্ছেদ লেখার জন্য ১০ থেকে ১৫ বাক্য হলে ভালো। ১০ থেকে ১৫ টি বাক্য দিয়ে গঠিত অনুচ্ছেদকে আমরা একটি আদর্শ অনুচ্ছেদ বলতে পারি।
- অনুচ্ছেদ লেখার ক্ষেত্রে একই বাক্য বারবার যেন ঘুরে ঘুরে ব্যবহৃত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
- অনেক সময় যৌক্তিক প্রয়োজনে অনুচ্ছেদ দীর্ঘতর হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভাব ও বিষয়ের সূক্ষ্মতার উপর বিবেচনা করে অনুচ্ছেদকে একাধিক অনুচ্ছেদে বিভক্ত করা যেতে পারে।
- অনুচ্ছেদের প্রথম বাক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম বাক্য সাধারণত মূলভাব বা বিষয়ে উল্লেখ করতে হবে।
- অনুচ্ছেদের পরের বাক্য গুলোর মধ্যে মূলভাবের বিস্তারিত রূপ তুলে ধরা হয়। অর্থাৎ প্রথম বাক্যে যে মূলভাব বা বিষয় উল্লেখ থাকে, তা পরবর্তী বাক্যগুলোতে আরো পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।
- অনুচ্ছেদের একেবারে শেষ বাক্যটিতে ভাব ও বিষয়ের পরিসমাপ্তির একটি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়।
অনুচ্ছেদ ১: জাতীয় পতাকা
জাতীয় পতাকা একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের এক অনন্য প্রতীক। পৃথিবীর প্রতিটি স্বাধীন দেশের আলাদা আলাদা জাতীয় পতাকা রয়েছে। প্রতিটি পতাকায় বিভিন্ন রং ও ডিজাইন এর মাধ্যমে সেই দেশের বিশেষ ভাব বা তাৎপর্যকে তুলে ধরা হয়। সাধারণত একখন্ড কাপড় দিয়ে জাতীয় পতাকা তৈরি করা হয় এবং এর এক বিশেষ আকার বা আকৃতি থাকে। এই আকার বা আকৃতি সুনির্দিষ্ট থাকে। পৃথিবীর অধিকাংশ পতাকায় আয়তাকার আকৃতির। একটি লম্বা দন্ডের সাথে আয়তাকার পতাকা বেঁধে টাঙ্গানো হয়। এই লম্বা দন্ডটিকে পতাকা দণ্ড বলা হয়। এক এক দেশের পতাকার এক এক ধরনের রং এক একটি বিশেষ ভাবকে তুলে ধরে। একটি দেশের জাতীয় পতাকা দেশের সকল সরকারি অফিস আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলনেরও বিশেষ নিয়ম কানুন থাকে। আন্তর্জাতিক খেলা যেমন ক্রিকেট ফুটবল বা অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী দলের জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়। বিভিন্ন শোক দিবস বা জাতীয় শোক দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় অর্থাৎ জাতীয় পতাকা পতাকা দন্ডের মাঝ বরাবর টাঙ্গানো হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রং লাল ও সবুজ। সবুজ ক্ষেত্রের উপর স্থাপিত রক্ত বর্ণের একটি বৃত্ত থাকে। সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যকে নির্দেশ করে। অপরপক্ষে রক্তিম লাল বৃত্ত উদীয়মান সূর্যের মতো মুক্তিযুদ্ধে আত্ম উৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতি নির্দেশ করে। আমাদের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য প্রস্থের অনুপাত ১০:৬। পতাকার সাইজ ছোট বা বড় করার ক্ষেত্রে এই অনুপাত অনুসরণ করা হয়।