১ নং সৃজনশীল প্রশ্নোত্তরঃ
পল্লির সন্তান অমিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষার্থে ফ্রান্স যায়। সেখানকার সুপ্রশস্ত রাজপথ, উদ্যান, নির্মল প্রকৃতি তার খুব ভালাে লাগে। রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস-স্টপেজ সব জায়গায় দেশি-বিদেশি স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে ফরাসিদের দেশপ্রেম দেখে সে বিস্মিত হয়। ওদের ক্যাফে, মিউসিয়াম সবকিছুই তাকে আকৃষ্ট করে। উচ্চশিক্ষা শেষ করে অমিত স্থায়ীভাবে। সেখানে থেকে যায়। তার অতীত স্মৃতি ফরাসি সৌন্দর্যের মােহে ক্রমশ ধূসর হয়ে যায়।
ক। উঠানে খইয়ের ধান ছড়ায় কে?
খ। মানুষ না হয়ে শঙ্খচিল, শালিকের বেশে জীবনানন্দ দাশ এদেশে ফিরতে চান কেন?
গ। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় উদ্দীপকের ফরাসি জাতির কোনদিকা | প্রতি ইঙ্গিত করে? বর্ণনা কর।
ঘ। অমিতের অনুভূতি আর জীবনানন্দ দাশের অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন—উক্তিটি মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ
ক) উঠানে খইয়ের ধান ছড়ায় একটি শিশু।
খ) মৃত্যুর পরও বাংলার প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার বাসনায় জীবনানন্দ দাশ শঙ্খচিল, শালিকের বেশে এদেশে ফিরতে চান।
জন্মভূমির প্রতি ভালােবাসা কোনাে মানুষই বিস্মৃত হয় না। কবিও এদেশের প্রকৃতির সৌন্দর্যকে হৃদয় দিয়ে উপভােগ করেছেন আজীবন। তার বিশ্বাস, এ বন্ধন মৃত্যুর মধ্য দিয়েও ছিন্ন হবে না। তাই তিনি এদেশের নদী, মাঠ, প্রকৃতিকে ভালােবেসে মানুষ না হয়ে শঙ্খচিল, শালিকের বেশে এদেশে ফিরে আসতে চেয়েছেন।
গ) আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় ফরাসি জাতির নিজস্ব ঐতিহ্য ও দেশ প্রেমের দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। উদ্দীপকের অমিত উচ্চশিক্ষার জন্য সে ফ্রান্স যায়। সেখানকার প্রশস্ত রাজপথ, উদ্যান, নির্মল প্রকৃতি তার খুব ভাল লাগে। রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন বাস স্টপেজ সব জায়গায় দেশি বিদেশী স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের মূর্তি স্থাপনের ফরাসিদের দেশপ্রেম দেখে সে বিস্মিত হয়। ফরাসিদের মিউজিয়াম ক্যাফে ইত্যাদি দেখে সে আকৃষ্ট হয়।
‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ এই বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন এবং বর্ণনা করেছেন বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। তিনি এই শালিকের দেশে, নবান্নের দেশে ভেসে কাঠাল ছায়ায় আসতে চান। তিনি বাংলার মাঝে ফিরে আসতে চান। এই বাংলায় এক জনমে তার স্বাধ মেটেনি। তাই তিনি পরবর্তীতে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে আসতে চান। এর দ্বারা কবির দেশের প্রতি যে গভীর ভালােবাসাই প্রকাশ পেয়েছে।
উদ্দীপকের ফরাসি জাতির প্রাকৃতিক পরিবেশ ঐতিহ্য এবং স্বদেশ প্রেমের যে পরিচয় পাওয়া যায় সেই রপ বর্ণনা পাওয়া যায় ‘আবার আসিব ফিরে কবিতায়। তাই বলা যায় আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় উদ্দীপকের ফরাসি জাতির নিজস্ব ঐতিহ্য এবং দেশ প্রেমের দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করে।
ঘ) উদ্দীপকের অমিতের অনুভূতি আর ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার জীবনানন্দ দাশের অনুভূতির মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখা যায়।
‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের আশাবাদ জন্ম জন্মান্তরেও এই বাংলার সঙ্গে তার বন্ধন ছিন্ন হবে না। নিজের দেশকে ভালােবেসে তার মনে হয় যখন তাঁর মৃত্যু হবে, তখনও এদেশের সঙ্গে তাঁর মমতার বাঁধন শেষ হবে না।
উদ্দীপকের অমিত বিদেশে পাড়ি জমানোর পর ধীরে ধীরে দেশকে ভুলে সেখানেই স্থায়ী বসবাস শুরু করে। আর কবি জীবনানন্দ দাশ মৃত্যুর পরও বার বার এই বাংলায় ফিরে আসার আকুতি ব্যক্ত করেন। উদ্দীপকের অমিত বাংলার প্রকৃতির কোলেই ছােট থেকে বড় হয়েছে, কিন্তু উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য বিদেশ যাওয়ার পর তার চিন্তাধারা পাল্টে যায়। দেশের প্রতি তার ভালােবাসার ছেদ পড়ে। স্বদেশ ও স্বদেশের প্রকৃতিকে মন থেকে মুছে ফেলে সহজেই তার চিন্তা চেতনা থেকে।
বাংলার রুপ কখনােই এতটা প্রভাব বিস্তার করেনি অকৃতজ্ঞ অমিতকে। কবি জীবনানন্দ দাশ ও উদ্দীপকের অমিতের অন্তরে স্বদেশ সম্পর্কে ভিন্ন চেতনা লক্ষণীয়। তাদের অনুভূতি ও চেতনা দেশপ্রেমের বিচারে বিপরীতধর্মী।