যে ৮টি কাজ ওজন কমাবেই…

ওবেসিটি বা স্থূলতা বর্তমান সময়ে একটি অত্যন্ত পরিচিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় ওজনের তুলনায় উচ্চতা অনুযায়ী ১০ ভাগ বেশি ওজন থাকলে তাকে আমরা অবেসিটি বা স্থূলতা বলে থাকি। আমাদের দেশে এই এই সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং এর ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যেমনঃ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা।

আজকের দিনে অনেকেরই প্রধান মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ওবেসিটি বা স্থূলতা। সকলে স্থুলতার দূরীকরণের বিভিন্ন উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আমাদের আজকের এই পর্বে ওবেসিটি বা স্থূলতা দূরীকরণের বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

১। ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েট প্ল্যানঃ

ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা প্রায়শই খাবার না খেয়ে থাকার পরামর্শ পেয়ে থাকি। খাবার না খেয়ে থাকা কোন ভালো পন্থা নয়। বরং এতে আপনার শরীরের ওজন আরো বেড়ে যেতে পারে।সবচেয়ে ভালো উপায় হল একটি ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েট প্ল্যান তৈরি করা। যেখানে শর্করা, প্রোটিন, শাকসবজি পরিমান মত থাকবে। ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েট প্ল্যান অনুযায়ী খাবার খেলে পুষ্টির ঘাটতি হবে না। না খেয়ে থাকলে বা হঠাৎ করে খাবার কমিয়ে দিলে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যা আপনার শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যেমনঃ ত্বক ও চুলের ঔজ্জ্বল্য কমে যাওয়া, নখ ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি। তাই ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েট প্ল্যান তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি যেখানে থাকবেন পর্যাপ্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফলমূল ও শাকসবজি।

২। তিন বেলা খাবারের পরিবর্তে ৫, ৬ বেলা খাবার খানঃ

কি অবাক হচ্ছেন? তিন বেলা খাবার খেয়ে ওবেসিটি বা স্থূলতা তৈরি হয়েছে, আর ৫, ৬ বেলার খাবার খেলে কি অবস্থা হবে!! বন্ধুরা, আমি এখানে বলতে চেয়েছি আমরা শুধু তিন বেলা ভরপেট খাবার না খেয়ে, খাবারটাকে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে খেতে পারি। যেমন ধরুন সকালে সাতটা সাড়ে সাতটার দিকে সকালের খাবার খেলেন। 11 টা দিকে একটু হালকা জাতীয় খাবার খেয়ে নিলেন। আবার দুপুর একটার দিকে দুপুরের খাবার খেলেন। তিনটা সাড়ে তিনটার দিকে বিকালের হালকা নাস্তা করলেন। সাড়ে সাতটা আটটার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করলেন। এভাবে ছোট ছোট ভাগে খাবার খেলে আপনার ওবিসিটি বা স্থূলতা অনেকটাই কমে আসবে।

৩। কাজের ধরন ও সময় অনুযায়ী খাবার নির্বাচনঃ

সকালে যে খাবারটি খাবেন, সেটি অবশ্যই ক্যালরির একটি বড় অংশ হতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পরোটা বা ভাতের পরিবর্তে লাল আটার রুটি খেতে হবে। ওমলেট বা পোচের পরিবর্তে সিদ্ধ ডিম খেতে হবে। সকালে হয়তো একটি মুরগির স্যুপ বা দই রাখতে পারেন।

দুপুর ও রাতে খাবারে যে মাছটি খান। সেটি অবশ্যই না ভেজে খেতে হবে। কারণ, আমরা এক চা চামচ তেল থেকে প্রায় ৪৫ কিলোক্যালরি পেয়ে থাকি। তাই আমাদের ওজন কমানোর জন্য তেলের পরিমাণটা বাদ দিতে হবে। আর বিকেলের নাশতায় চর্বিযুক্ত কোনো খাবার না খেয়ে ছোলা, ফলের সালাদ, ফলের জুস খেতে পারেন।

সকালের তুলনায় আমাদের অবশ্যই রাতে কম খেতে হবে। কারণ, সকালের নাশতা খাওয়ার পর আমাদের সারা দিন প্রচুর কাজ করতে হয়। এতে ক্যালরি খরচ হয় বেশি। রাতে খাবারের পর শারীরিক কোনো কাজ না করার কারণে ক্যালরি ঝরানোর কোনো বিষয় থাকে না। তাই সকালের তুলনায় বা অন্যান্য মিলের তুলনায় আমাদের অবশ্যই রাতের বেলা পরিমাণে কম খেতে হবে।

৪। টক দই, বাদাম ও ওটস খানঃ

প্রতিবেলার খাবারের পর এক কাপ করে টক দই খান। এটি শরীরের চর্বিকে ঝরাতে কাজ করবে। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্তত দুই থেকে পাঁচ পিস পর্যন্ত বাদাম খাবেন। বাদাম শরীরের চর্বিকে ঝরিয়ে থাকে। এ ছাড়া ওটস নিতে পারেন, সালাদ নেবেন প্রচুর।

৫। পর্যাপ্ত পানি পান করুন:

শরীরের জন্য পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচানোর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা প্রয়োজন। ওবেসিটি বা স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পানি গ্রহণের প্রয়োজন। বিশেষত প্রতিবেলা খাবারের পূর্বে এক গ্লাস পানি পান করুন। এতে আপনার অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

৬। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানঃ

ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে শরীরের মেটাবলিজম বিপর্যস্ত হয়। এতে ক্যালোরি ক্ষয় কম হয়। শরীর দুর্বল থাকে এবং স্থূলতা বা ওবেসিটি তৈরিতে সহায়ক হয়। তাই প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম ওবেসিটি নিয়ন্ত্রনে অত্যন্ত কার্যকরী।

৭। হাটুন ও নিজেকে সচল রাখুনঃ

হাঁটা অত্যন্ত কার্যকরী একটি ব্যায়াম। শরীর সুস্থ রাখতে এবং স্থূলতা কমাতে হাটার কোন বিকল্প নেই। হাঁটা সকল বয়সের মানুষের জন্য একটি কার্যকরী ব্যায়াম। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য হাটা ঔষধ এর মত একটি কার্যকরী ব্যায়াম। অনুরূপভাবে ওবিসিটি নিয়ন্ত্রণে হাটা বেশ কার্যকরী। সকাল বিকাল দুই বেলা হাটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এছাড়া সার্বক্ষণিক নিজেকে সচল রাখার চেষ্টা করুন। যেমন: লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠুন। এভাবে আপনি অনেক বেশি ক্যালোরি পোড়াতে পারেন। ওবেসিটি নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী হবে।

৮। গ্রীন টি ও আপেল খানঃ

গ্রিন টি ও আপেল এন্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ।এন্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের মেটাবলিজমকে আরো শক্তিশালী করে। নিয়মিত গ্রীন টি সেবন শরীরে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

মোটকথা হলো, ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের অবশ্যই শর্করা জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। প্রোটিন জাতীয় খাবার, ফল ও সবজি প্রচুর থাকতে হবে। এ ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের প্রতিদিন বায়াম করতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে।

বন্ধুরা খাবার না খেয়ে ওজন কমানোর যে অপকারিতা রয়েছে তা সম্পর্কে জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন:না খেয়ে ওজন কমানোর ভয়াবহ পরিণাম

Leave a Comment