Homeবাংলাবাংলা রচনাদৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

Author

Date

Category

সূচনা:

আধুনিক যুগকে বিজ্ঞানের যুগ বলে অভিহিত করা হয়। বিজ্ঞান মানব সভ্যতার এক বিশিষ্ট অবদান। দৈনন্দিন জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করা যায়, বিজ্ঞান মানবকল্যাণে কত বেশি অবদান রাখছে। অক্সিজেন বা পানি ছাড়া যেমন প্রাণীকুল কল্পনা করা যায় না, তেমনি বর্তমান সভ্যতা বিজ্ঞান ছাড়া কল্পনা করা যায় না। বিজ্ঞান আমাদের উপহার দিয়েছে নানা জিনিস যা আমাদের জীবনে এনেছে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি। মূলত মানব সভ্যতার বিকাশের পেছনে বিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম।

বিজ্ঞান কি?

আভিধানিক অর্থে বিজ্ঞান হল বিশেষ জ্ঞান। বিজ্ঞান শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ science. আবার Science শব্দটি Scio থেকে এসেছে যার অর্থ জানা বা শিক্ষা করা। তাই বিজ্ঞান হলো সুশৃংখল ও সুসংবদ্ধ জ্ঞান। প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বিজ্ঞানের একটি সুন্দর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন: বিজ্ঞান শুধু একটি বিশেষ জ্ঞানের নাম নয়, একটি বিশেষ প্রণালী অবলম্বন করে যে জ্ঞান লাভ করা যায়, আসলে তারই নাম হচ্ছে বিজ্ঞান। অসংখ্য বিষয় নিয়ে গড়ে উঠেছে বিজ্ঞান জগৎ এবং এই জগত ক্রমেই বর্ধিত হচ্ছে।

জীবন ও বিজ্ঞান:

প্রয়োজন বোধ থেকেই সকল সৃষ্টির শুরু। আর সেই প্রয়োজন থেকেই বিজ্ঞানের বিচিত্র আবিষ্কারও সাধিত হয়। তাই একথা বলা যেতে পারে বিজ্ঞান এর সৃষ্টি হয়েছে মানুষের নানা বিধ প্রয়োজন থেকে। মানুষের প্রয়োজন বোধ বা অভাব বোধ থেকে মানুষ বিশেষ জ্ঞান, বিজ্ঞানের সৃষ্টি করেছে। আর এই কারণে মানুষের জীবনের সাথে বিজ্ঞানের গুরুত্ব অত্যন্ত নিবিড়। মানুষ তার বিশেষ জ্ঞান, বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তার জীবনকে অধিকতর সুখকর করার চেষ্টায় অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের ধারণা বিশ্বাস ইত্যাদি পরিবর্তন হচ্ছে। আজ আমরা যেকোন বিষয়ে যুক্তিতর্ক ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দ্বারা বিশ্লেষণ করে দেখতে চাই। সুতরাং বলতে পারি মানব জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব অত্যন্ত সুদৃঢ়।

বিজ্ঞানের গুরুত্ব:

বর্তমান বিশ্বে সর্বত্রই বিজ্ঞানের জয়গান লক্ষ্য করা যায়।মানব সমাজের প্রতিটি দিকেই আজ বিজ্ঞানের জয়গান, বিজ্ঞানের মহিমা পরিলক্ষিত হয়। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় ফলে মানুষ আজ জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে জয় করেছে। মানুষ পৌঁছে গেছে আজ মহাশূন্যে। বিজ্ঞান আজ মৃত্যুকে জয় করার সংকল্পে ব্যস্ত। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে আমরা পেয়েছি বিদ্যুৎ, কাগজ, মুদ্রণ যন্ত্র, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, উড়োজাহাজ, রকেট সহ আরো অসংখ্য বিস্ময়কর জিনিস সমূহ। বিজ্ঞানের বদৌলতে আজ আমরা এক দেশের খবর অন্য দেশে নিমেষের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছে। দূরত্ব কমিয়ে সারা পৃথিবী কে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। কাগজ ও মুদ্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষা ক্ষেত্রে এনেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। পরিবহন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এনেছে গতি। মূলত বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ও নতুন নতুন আবিষ্কার আমাদের জীবনকে করেছে স্বাচ্ছন্দময়।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান নিয়ে এসেছে অভাবনীয় সকল যন্ত্রপাতি। এসকল আবিষ্কার আজ মানুষের অকাল মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা করছে। এক সময় ছিল যখন মানুষ কলেরা, বসন্ত, যক্ষা ইত্যাদিতে অসময়ে মৃত্যুবরণ করত। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও মানসম্মত ঔষধ অস্ত্রোপচার ব্যবস্থা এক্সরে, আল্ট্রা-সনোগ্রাফি, অণুবীক্ষণ, যন্ত্র ইত্যাদি আবিষ্কার মানুষের মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে।

যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

বিজ্ঞান আধুনিক যোগাযোগ ক্ষেত্রে অসাধ্যকে সাধন করেছে। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার পুরোটাই বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল।যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ ও দ্রুততর করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করে চলেছেন নতুন নতুন যানবাহন। বাষ্প ইঞ্জিন থেকে শুরু করে বুলেট ট্রেন সবই বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় নিদর্শন। বর্তমানে মানুষ হাইপারলুপ ট্রেন নামক যন্ত্র আবিষ্কার করার লক্ষ্যে কাজ করছে। যা মানুষকে দিবে অভাবনীয় গতি। এভাবে প্রতিদিনই বিজ্ঞান যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও অধিকতর গতিশীল করে তুলছে।

কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

আধুনিক বিজ্ঞান কৃষি ক্ষেত্রে ও অকল্পনীয় উন্নতি সাধন করেছে। প্রাচীন বাংলার পরিবর্তে আজ এসেছে উন্নত মানের কলের লাঙ্গল, ট্রাক্টর। এক সময় মানুষ পাকা ধান ঘরে তোলার জন্য দিনমজুরের উপরে নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে কম্বাইন্ড হারভেস্টার নামক যন্ত্র মানুষের ১০ দিনের কাজ এক ঘন্টায় করে দিচ্ছে। এছাড়া নতুন নতুন জাতের ধান,ফলমূল-শাকসবজি আবিষ্কারের পেছনে ও বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে। একসময় দেশের জনসংখ্যা সাত কোটি ছিল তখনও দেশে খাদ্য সংকট ছিল বর্তমানে দেশে জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এই বিশাল বর্ধিষ্ণু জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণে বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রে সাফল্য প্রদর্শন করেছে।

প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞান:

বিজ্ঞানের স্পর্শে মানুষ আজ প্রকৃতির বিভিন্ন দিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষ এখন প্রাকৃতিক শক্তিকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। এসকল আবিষ্কার মানুষের বিভিন্ন দিক থেকে কল্যাণ বয়ে আনছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস, নদী শাসন প্রভৃতি ক্ষেত্রে মানুষ বিজ্ঞানের বদৌলতে আজ অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ঝড়, বন্যা, সাইক্লোন সহ আরো অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে রক্ষা করেছে। মোটকথা বিজ্ঞানের কল্যাণে একসময়কার ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক শক্তি আজ সুন্দরী প্রেয়সীতে রুপান্তরিত হয়েছে।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান:

বিজ্ঞান মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আরাম-আয়েশ ও স্বাচ্ছন্দ দিয়েছে। রেডিও টেলিভিশন সংবাদপত্র বৈদ্যুতিক বাতি পাখা টেলিফোন মোবাইল মানুষের জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত সহজ ও আরামদায়ক করেছে। অফিস-আদালতের নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্রের মধ্যে কম্পিউটার ফটোস্ট্যাট মেশিন টেলেক্স ফ্যাক্স ইত্যাদি যন্ত্রপাতি কাজে এনেছে গতি। আমরা একটু লক্ষ করলেই এরকম আরো অসংখ্য জিনিস খুঁজে পাব যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব কিছুই আধুনিক বিজ্ঞানের অবদান।

অপকারিতা:

বিজ্ঞান একদিকে যেমন মানুষের অশেষ কল্যাণ সাধন করেছে, তেমনি এনেছে বিভীষিকা। এটমবোম হাইড্রোজেন বোমা সহ আরো অনেক মারাত্মক মারণাস্ত্র আবিষ্কারের ফলে মানব সভ্যতা ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।ডিনামাইট বোমারু বিমান সাবমেরিন ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে মানব জীবনে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ এ পরিণত হয়েছে। এর প্রমাণ স্বরূপ আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখতে পাই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর এর উপরে আমেরিকার পারোমানিক বোমা নিক্ষেপ এমনই এক বিভীষিকার নাম। এছাড়া যে কারণে আফগানিস্তান ইরাক ফিলিস্তিন প্রভৃতি দেশ গুলোর ক্রমান্বয়ে জনশূন্য ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছে তা আধুনিক বিজ্ঞানের অপকার বলা যায়।

উপসংহার:

মানব সভ্যতার অগ্রগতির পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান আমাদের সুখ শান্তি সমৃদ্ধি দান করেছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করেছে গতিময় ও সুন্দর। আমরা দৈনন্দিন জীবনের উপকারী দিক এর সাথে সাথে কিছু উপকারী দিকও দেখতে পাই। তবে এই সকল অপকারী দিকের জন্য বিজ্ঞানকে পুরোপুরি দায়ী করা যাবে না। বিজ্ঞানের শক্তিকে অপব্যবহারের পিছনে মানুষেরই হাত রয়েছে। মানুষ যদি বিজ্ঞানের শক্তিকে অপব্যবহার না করে শুভবুদ্ধির দ্বারা চালিত করে তবে বিজ্ঞান মানবসভ্যতা আরো অনেক অনেক দূরে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Md. Sohel Rana

Senior Teacher, Milestone College

Md. Sohel Rana, the author of BD24 Online School and Senior Teacher of Milestone School and College.

Recent posts

Recent comments