কোন গদ্য-পদ্যের বক্তব্যকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করার নামই সারমর্ম বা সারাংশ।এক্ষেত্রে গদ্যের মূলভাব কে সংক্ষেপে প্রকাশ করাকে সারাংশ অপরপক্ষে কবিতার মূলভাবকে সারমর্ম বলে।
সারাংশ ও সারমর্ম লেখার সময় যেসকল বিষয় মনে রাখতে হবেঃ
১. যে অংশটুকুর সারাংশ সারমর্ম আলোচনা করতে হবে সে অংশটুকু অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
২. সারাংশ ও সারমর্মতে উপমা রূপক জাতীয় সংসদ দিয়ে লিখতে হবে।
৩. আমি, আমরা বা তুমি, তোমরা – দিয়ে বাক্য শুরু করা যাবে না।
৪. সারাংশ ও সারমর্ম রচনার ক্ষেত্রে বাড়তি কথাবার্তা বাদ দিতে হবে।
৫. মূল অনুচ্ছেদটিতে কারো উদ্ধৃতি থাকলে সে উদ্ধৃত অংশটুকু বাদ দিয়ে মূল কথাটি লিখতে হবে।
সারাংশঃ
১. মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী। জগতের অন্যান্য প্রাণীর সহিত মানুষের পার্থক্যের কারণ- মানুষ বিবেক ও বুদ্ধির অধিকারী। এই বিবেক বুদ্ধি ও জ্ঞান নাই বলিয়া আর সকল প্রাণী মানুষ অপেক্ষা নিকৃষ্ট। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের উৎকর্ষ সাধন করিয়া মানুষ জগতের বুকে অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করিয়াছে; জগতের কল্যাণ সাধন করিতেছে। পশু বল ও অর্থবল মানুষকে বড় মহৎ করিতে পারেনা। মানুষ বড় হয় জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের বিকাশে। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের প্রকৃত বিকাশে জাতির জীবন উন্নত হয়। প্রকৃত মানুষই জাতীয় জীবনের প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন আনয়নে সক্ষম।
সারাংশ: মানুষের বিবেক বুদ্ধি ও জ্ঞান রয়েছে যা অন্যান্য পশুপাখির নেই। জ্ঞানের শক্তিতেই মানুষ জগতের অক্ষয় কীর্তি অধিকারী হয়েছে। পশু বল বা অর্থবল মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের অনুশীলন করার মাধ্যমে কল্যাণকামী মানুষ জাতীয় কল্যাণ করতে সক্ষম হয়।
২. সময় ও স্রোত কাহারো অপেক্ষায় বসে থাকে না, চিরকাল চলিতে থাকে। সময় এর নিকট অনুনয় করো, ইহাকে ভয় দেখাও ভ্রুক্ষেপ করিবেনা, সময় চলিয়া যাইবে, আর ফিরবে না। নষ্ট স্বাস্থ্য ও হারানো ধন পুনঃপ্রাপ্ত হওয়া যায়, কিন্তু সময় একবার গত হইয়া গেলে আর ফিরিয়া আসেনা। কত সময়ের জন্য অনুশোচনা করা নিষ্ফল। যতই কাঁদো না গত সময় আর ফিরিয়া আসবেনা।
সারাংশ: সময় চিরবহমান। শত চেষ্টা করেও সময়ের গতি কে কেউ রুদ্ধ করতে পারেনা। চেষ্টা ও শ্রম দিয়ে হয়ত লুপ্ত স্বাস্থ্য বা ধ্বংস হওয়া ধন-সম্পদ পুনরায় উদ্ধার করা যায়। কিন্তু চলে যাওয়ার সময় কে শত চেষ্টায়ও কখনো ফিরিয়ে আনা যায় না।
৩. অপরের জন্য তুমি প্রাণ দাও, আমি তা বলতে চাইনে। অপরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখ তুমি দূর করো। অপরকে একটুখানি সুখ দাও। অপরের সঙ্গে একটুখানি মিষ্টি কথা বল। পথের অসহায় মানুষটির দিকে একটু করুণ চাহনি নিক্ষেপ করো, তাইলে অনেক হবে। চরিত্রবান, মানবতা সম্পন্ন মানুষ নিজের চেয়ে পরের অভাবে বেশি অধীর হন, পরের দুঃখকে ঢেকে রাখতে গৌরব বোধ করেন।
সারাংশ: ছোট ছোট কাজ ও সহায়তা তারা আমরা মানুষের উপকার করতে পারি। একটু স্নেহ ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আমরা অন্যের মনে আশা জাগাতে পারি। এতেই মানুষের মহত্ত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।
৪. অভাব আছে বলিয়া জগৎ বৈচিত্র্যময়। অভাব না থাকলে জীব সৃষ্টির বৃথা হইত। অভাব আছে বলিয়া অভাব পূরণের জন্য এত উদ্যম, এত উদ্যোগ। আমাদের সংসার অভাব ক্ষেত্র বলিয়াই কর্মক্ষেত্র। অভাব না থাকিলে সকলেই স্থানু, স্থবির হইতে হইতো, মনুষ্য জীবন বিড়ম্বনা ময় হইত। মহা জ্ঞানীরা হইতে দুঃখ দূর করিবার জন্য ব্যগ্র। কিন্তু জগতে দুঃখ আছে বলিয়াই তো আমরা সেবার সুযোগ পাইয়াছি। সেবা মানব জীবনের ধর্ম। দুঃখ আছে বলিয়াই শেষ এবার পাত্র যত্রতত্র সদা কাল ছড়াইয়া রহিয়াছে। যিনি অন্নদান, বস্ত্রদান, জ্ঞান দান, বিদ্যা দান করেন, তিনি যেমন জগতের বন্ধু। তেমনি যিনি দুঃখে আমাদেরকে সেবার পাত্রে অজস্র দান করিতেছেন, তিনিও মানবের পরম বন্ধু। দুঃখকে শত্রু মনে করিও না। দুঃখ আমাদের বন্ধু।
সারাংশ: অভাব জীবনকে কর্মময় জগতকে বৈচিত্র্যময় ও মানুষকে উদ্যোগী করেছে। সেবা ধর্মের উৎস এই অভাব। অপরের দুঃখ দূর করার মাধ্যমে মানুষের মন মনুষত্ব ও মানবতাবোধে মহান হয়ে ওঠে। তাই দুঃখ মানুষের শত্রু নয় বরং বন্ধু।
৫.
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে
মুখে হাসি বুকে বল তেজে ভরা মন
মানুষ হইতে হবে এই যার পণ
সারমর্মঃ আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা অনেক কথা বলে কিন্তু কাজের সময় ফাঁকি দেয়। এ সকল মানুষ সমাজে অগ্রগতির জন্য কোন কাজে আসে না। তাই বড় বড় কথা না বলে, মানুষ হওয়ার পণ নিয়ে কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।