ক। প্রাণখোলা বর্ষায় গাছপালা স্নান করে।
খ। শ্রাবণ মাসে অবিরাম ধারা বর্ষণ ঘটে বলে শ্রাবণকে উন্মাদ শ্রাবণ বলা হয়েছে।
গ্রীষ্মের দাবদাহে জর্জরিত প্রকৃতি অবিরাম বর্ষায় যেন স্নান করে। বর্ষা প্রকৃতিতে বয়ে আনে প্রাণ। শ্রাবণ মাসে সারাদিন সারারাত তখন নামতা পড়ার শব্দের মত অবিরল ধারায় বৃষ্টির জল পড়তে থাকে। এই জল পরার যেন কোন শেষ নেই। এই অবিরাম বৃষ্টি চারদিকে প্লাবনের সৃষ্টি করে। শ্রাবণ মাসে এরকম অবিরাম বৃষ্টিপাত হয় বলে কবি শ্রাবন মাসকে উন্মাদ শ্রাবন বলে অভিহিত করেছেন।
গ। ১ম উদ্দীপককে ‘শ্রাবণে’ কবিতায় বর্ণিত বর্ষায় প্রকৃতিতে প্রাণের সঞ্চার ঘটায় দিকটি চিত্রিত হয়েছে।
‘শ্রাবণে’ কবিতায় বর্ষার জলে গাছপালা নদী-নালা থেকে শুরু করে রুক্ষ প্রকৃতি মুহূর্তেই জলে পরিপূর্ণ হয়। প্রকৃতিতে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। গ্রীষ্মকালের রোদের চিহ্ন ধুয়ে মুছে প্রকৃতির তপ্ত হৃদয় সিক্ত হয়। গাছপালা বর্ষার জলে স্নান করে ধুলোবালি মুক্ত হয়ে শুদ্ধ হয়।
উদ্দীপক-১ এ বর্ণিত হয়েছে, মেঘপূর্ণ আকাশে কীভাবে রোদের তীব্রতা নিঃশেষিত হয়েছে। রোদ বা সূর্য তার তীব্রতা ছড়িয়ে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে। কেয়াবনে জলধারা সৃষ্টি হয়েছে। কদমের শাখায় অস্ফুট কলিতে ছোট ছোট রেণু খুলে দেওয়ার চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে বর্ষার প্রকৃতিতে প্রাণের সঞ্চার ঘটার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অর্থাৎ রৌদ্রের কাঠিন্যমুক্ত হয়ে প্রকৃতির মধ্যে যেন একটা স্বপ্ন জেগে উঠেছে। সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে প্রথম উদ্দীপকে শ্রাবণে কবিতায় বর্ণিত বর্ষার প্রকৃতিতে প্রাণের সঞ্চার হওয়ার দিকটি ফুটে উঠেছে।
ঘ। ২য় উদ্দীপকটিতে ‘শ্রাবণে’ কবিতার শেষ চরণের ভাবধারা অর্থাৎ মানবমনের বিচিত্রতা ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ প্রতিফলিত হয়েছে।
‘শ্রাবণে’ কবিতার কবি সুকুমার রায় অপরিসীম দক্ষতায় শ্রাবণ দিনে বর্ষা প্রকৃতিকে কীভাবে বদলে দেয় তার অপরূপ বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন। পাশাপাশি তুলে ধরেছেন প্রকতির এই পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত মানব মনের রূপটি। অর্থাৎ প্রকৃতির সাথে মানব মনেরও রূপ বদলায়।‘শ্রাবণে’ কবিতার বলা হয়েছে ঋতুর পালাবদলের মতো মানব-মনের আশা- আকাঙ্ক্ষা ও সুখ-দুঃখের পালাবদল ঘটে। তাছাড়া বর্ষার প্রবল বর্ষণ মানব মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। মনের এক ধরনের শূন্যতা থেকে তার কল্পনা শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে।
উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে মানব মনের চিরন্তন স্বপ্নময়তা। মানুষ বেঁচে থাকে স্বপ্নের মধ্য দিয়ে। রঙিন কাঁথার মতো করেই সে যেন তার স্বপ্নের জাল বিস্তার করে। রঙিন কাঁথায় ফুল তোলার মতোই তার স্বপ্নকে বুনন করে। রঙিন কাঁথার মতোই মেলে ধরতে প্রয়াসী হয় মনের অন্তহীন ভাবনা কল্পনাকে। দীঘল সুতা মায়াাবী অক্ষর দিয়েই সে লিখে যায় তার মনের কথাগুলো।
সুতারাং নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উদ্দীপক (২)-এ যেন শ্রাবনে কবিতার শেষ চরণের ভাবার্থ প্রতিধ্বনিত হয়েছে। ঋতুর পালাবদলের মধ্যদিয়ে মানব মনের আশা-আকাঙ্ক্ষার পালাবদল ঘটে।